মোঃ রবিউল হোসেন খান : খুলনা ব্যুরো : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্নব সরকারের মা চন্ডী রানী জানেন না তার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি জানেন ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।ছেলেকে হারিয়ে তিনি বিলাপ করছেন। তাকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা।চন্ডী রানীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। সন্তানকে হারিয়ে গত রাত থেকে নির্ঘুম কাটিয়েছেন তিনি।আর অর্নবের বাবা ও ছোট ভাই বিলাপ করছেন। তাদের শান্তনা দিতে দেখা গেছে প্রতিবেশীদের। শনিবার ২৫ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় নগরীর বানরগাতি এলাকায় অর্নবের বাড়িতে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়।বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় থেকে একটি সরু পথ দিয়ে কিছু দুর এগিয়ে একতলা একটি ভবনে বসবাস করেন নিতিশ কুমার সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা।ওই সরু গলিতে বাস করেন তার আরো চার ভাই। পরিবারের সদস্যরা অর্নবকে হারিয়ে সকলে যেন নির্বাক।রাস্তার মোড়ে অর্নবের বাবাকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাকে ঘিরে অনেক মানুষের জটলা।নির্বাক হয়ে বসে আছেন তিনি।তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিছু মানুষ। কিছুক্ষন পর পর সন্তানের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছেন তিনি।তিনি উপস্থিত সকলকে বলতে থাকেন, আমার বাবা কারও সাথে কোন দুর্ব্যবহার করেনি।আমিও কোন দিন কারো ক্ষতি করিনি।কেন ওরা আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করলো।কার কাছে বিচার দেব আমি।কে করবে বিচার।মা চন্ডী রানী বিলাপ করে বলছেন কেন মোটরসাইকেল নিয়ে বাহিরে গেলি,আমার বুকে ফিরে আয় আমার বাবা।তার এ আর্তনাদ দেখে উপস্থিত সকলের চোখে পানি চলে আসে। ঘরের বাহিরে কাঁদছিলেন নিহত অর্নবের ছোট ভাই অনীক কুমার সরকার। তিনি জানালেন আজ তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের পরিক্ষা খুলনা সিএসএস কেন্দ্রে ছিল।কিন্তু বড় ভাইকে হারিয়ে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন। তিনি বলেন শুক্রবার বিকাল ৪ টার দিকে অর্নব বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ৮ টার দিকে লাবনী নামে এক বড় আপু তাকে ফোন করে বলেন তার ভাই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন অর্নবের সাথে কারো শত্রুতা থাকতে পারে না।তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো।তিনি বলেন অর্নব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র ছিল।এলাকা ঘুরে জানা গেল অর্নবের বাবা একজন কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী।পড়াশুনার পাশাপাশি সে বাবার ব্যাবসা দেখাশুনা করতো।কোন দিন সে কারও সাথে দুর্ব্যবহার করেনি।বড়দের সন্মান করে চলতো।এলাকার তুহিন নামের একজন বলেন সন্তাসীরা এতক্ষোভ নিয়ে তাকে হত্যা করবে তা তারা কখনো ভাবতেও পারেনি।ওই এলাকার আরেকজন মিন্টু হোসেন বলেন,নিহত অর্নবদের আদি বাড়ি রামপাল উপজেলার রাজনগর এলাকায়।তাদের জন্ম এখানে। কোনদিন দেখিনি কারো সাথে দুর্ব্যবহার করতে।তবে যতদুর জেনেছি গত ১৫ দিন আগে ব্যবহ্নত একটি মোবাইল ফোন বিয়ে বাড়িতে হারিয়ে যায়।সে ঘটনায় সে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সোয়া ৯ টার দিকে খুলনা নগরীর শেখ পাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে একটি মোটর সাইকেলে বসে অর্নব চা পান করছিলো। এ সময় ১০ -১৫ টি মোটরসাইকেলে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা এসে প্রথমে তাকে গুলি করে। গুলি তার তার গায়ে লাগার পর রাস্তার ওপর পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রেখে যায়।পটে আশংকা জনক অবস্থায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অর্নব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবসা প্রশাসন ডিসিপ্লিনের এমবিএর ছাত্র। তার রোল নম্বর : ২৩০৩১৭।সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শফিকুল ইসলাম বলেন,অর্নব হত্যার ঘটনায় আজ শনিবার বেলা,দেড়টা পর্যন্ত মামলা হয়নি।এদিকে অর্নবের মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বেলা পৌনে ১ টায় প্রথমে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখান থেকে সৎকার করার জন্য গল্লামারী শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমাদের নিউজ পোর্টালের যে কোন সংবাদ কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ। আমরা সর্বদা সত্য ন্যায় সচ্ছতা ও সঠিক নিউজ প্রকাশে বদ্ধ পরিকর। দৈনিক যুগবাহক দেশের ও দেশের মানুষের সেবাই সর্বদা নিয়জিত।