কুষ্টিয়া সদর থানা প্রতিনিধি:
৯ নভেম্বর ২০২৪ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলোতে ফি বাড়ানো হলেও, খাবারের মানে কোনো উন্নতি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ের খাবারের মূল্য প্রায়ই বাড়ানো হলেও, সেবা এবং খাবারের গুণগত মানের দিকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। গত আট বছরে আবাসিক হলের ফি প্রায় চারগুণ বেড়েছে, কিন্তু খাবারের ভর্তুকি একেবারেই বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য মিলরেট ৩০ বা ৪০ টাকার মধ্যে হলেও, ডাইনিং ম্যানেজাররা মেন্যুভেদে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।
এর ফলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন যে, খাবারের মান কমেছে এবং পচা-বাসি খাবারের শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে আবাসিক ফি ছিল ৭১৮ টাকা, যা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালে এই ফি আরও বাড়িয়ে ৩ হাজার ১৮০ টাকা করা হয়। তবে, ডাইনিংয়ের জন্য ভর্তুকি মাত্র ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকায় পৌঁছানো হয়েছে। এই পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে মানসম্মত খাবার পরিবেশন কঠিন বলে দাবি করছেন ডাইনিং ম্যানেজাররা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডাইনিংয়ের খাবারের মান খারাপ হয়ে গেছে। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, মাছের পরিবর্তে প্রায়ই তাদের বিস্কুটের মতো ছোট পিচ দেওয়া হয়, আর একই সবজি প্রতিদিন পরিবেশন করা হয়। খাবারে পোকা পাওয়া এবং পচা-বাসি খাবারের অভিযোগও এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল দফতর জানায়, বর্তমানে আবাসিক হলের খাবার প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এদিকে, হলের খাবারের মান নিয়ে বারবার অভিযোগ করার পরও প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, খাবারের মান নিয়ে কথা বললে, ছাত্রী হলের শিক্ষকেরা তাদেরকে বাইরে গিয়ে অভিযোগ করতে নিষেধ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ত্বকি ওয়াসিফ বলেন, ‘ডাইনিংয়ে বাধ্য হয়ে খেতে হয়। হলের ভাত ও তরকারির অবস্থা খুবই খারাপ। মাছের চেয়ে বিস্কুটের সাইজও বড়। একদিকে খাবারের দাম বাড়ছে, আর অন্যদিকে মান বাড়ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তুকি বাড়ানো উচিত, যাতে মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট, প্রফেসর ড. এ.টি. এম. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, পূর্বে হল ডাইনিংয়ের জন্য যে ভর্তুকি ছিল, তা গত জুলাই মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অন্য খাত থেকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আপাতত ভর্তুকি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই, তবে ডাইনিংয়ের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওবায়দুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বাস্তবসম্মত। ভর্তুকি বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। আমি প্রশাসনের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করব।’ প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ভিসি স্যারের সাথে আলোচনা করছি, কিভাবে ভর্তুকি বাড়ানো যায় এবং খাবারের মান উন্নত করা যায়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে, তবে আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছে।