মোঃ রবিউল হোসেন খান : খুলনা ব্যুরো : খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে এক পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন কনস্টেবল লিটন কুমার দেবনাথ ওরফে সাহারিয়ার কবির লিটন( কং নং ৫৯৬) তিনি খাগড়াছড়ি জেলার রামনগর উপজেলার ১ নং ওয়ার্ড পৌরসভার জনৈক অভিলাস দেবনাথের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আজ ২৯ জানুয়ারি খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো: কেরামত আলী এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলফাজ হোসেন শেখ।আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ রা মার্চ বিকাল পৌনে ৪ টার দিকে রুপসা উপজেলার শিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই ফিরোজ ঐ এলাকায় টহল দেওয়ার সময় লোকমুখে জানতে পারেন উপজেলার ডোবা গ্রামস্থ জনৈক অশোক অধিকারের বাড়ির পেছনে অজ্ঞাত নামা এক মহিলার মরদেহ পড়ে আছে।এমন সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি মরদেহ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রুপসা থানায় অজ্ঞাত আসামীদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।আদালত সুত্র আরো জানায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা কোচপাড়া এলাকার সামসুল আলমের কন্যা আরজু আক্তারকে প্রেম নিবেদন সহ বিয়ের প্রস্তাব দেয় পুলিশ সদস্য লিটন কুমার। লিটন কুমার অন্য ধর্মাম্বলী ও দু সন্তানের জনক হওয়ায় আরজু বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু পুলিশ সদস্য লিটন কুমার তাকে বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখায়। পরে আরজু আক্তার সহ পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় ওই পুলিশ সদস্য।হুমকির পর পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়।২০১৯ সালে ১ লা জানুয়ারি এভিডেভিড করে লিটন নাম পরিবর্তন করে আরজুকে বিয়ে করে এবং এর মধ্যে তাদের কোল জুড়ে জন্ম নেয় আবিদ হোসেন অথৈ নামের একটি ছেলে সন্তান। ঔই বছরের ১৯ অক্টোবর বদলি হয়ে তারা উভয়ে খুলনায় চলে আসে এবং রুপসা উপজেলার পুটিমারি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেয়।সেখানে কিছুদিন থাকার পর উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং আরজুকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতে তাকে।এ ঘটনার পর বাড়ির মালিক লিটন কুমার দেবনাথকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে লিটন একই এলাকার নাদিরা বেগমের বাড়ি ভাড়া নেয়।সেখানে কিছু দিন শান্ত থাকার পর পুলিশ সদস্য আবারও স্ত্রীকে মারধর করে।এঘটনার পর আরজু পিতার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।আরজু ছেড়ে চলে গেলে চাকুরির ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে এই আশংকায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে লিটন।পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে আরজু আক্তারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে লিটন এবং ভেসে না ওঠে সেজন্য লোহার পাত সহ মরদেহ রুপসা আঠারো বেকী নদিতে ফেলে দেয়।হত্যার পর অপপ্রচার চালানো হয় স্ত্রী বাচ্চা রেখে পালিয়ে গেছে।এ ঘটনায় স্থানীয়রা বলতে থাকেন, সে স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এমনকি এব্যাপারে সে আইনি কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুটিমারি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে সন্দেহ করতে থাকে।তাছাড়া নদি থেকে লাশ উদ্ধারের ছবি তাকে দেখালে এটি তার স্ত্রী না বলে অসীকার করে।মরদেহর ছবি প্রতিবেশীদের দেখানো হলে তারা শনাক্ত করেন যে এটি আরজু আক্তারের। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে পুলিশ নিশ্চিন্ত হয় এটি আরজুর লাশ।পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ সদস্য লিটনকে এস আই ফিরোজের দায়ের করা মামলায় ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর শিরোমনি আরআই অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান লিটন কুমারকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন।
আমাদের নিউজ পোর্টালের যে কোন সংবাদ কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ। আমরা সর্বদা সত্য ন্যায় সচ্ছতা ও সঠিক নিউজ প্রকাশে বদ্ধ পরিকর। দৈনিক যুগবাহক দেশের ও দেশের মানুষের সেবাই সর্বদা নিয়জিত।