মেসার্স জীবন ব্রিকস’ এখন ‘মেসার্স জীরন ব্রিকস’ ইটভাটা, জানে না পরিবেশ অধিদপ্তর

লেখক:
প্রকাশ: 8 hours ago

  1. জামালপুর থেকে জাকিরুল ইসলাম বাবু

‘মেসার্স জীবন ব্রিকস’ এখন ‘ মেসার্স জীরন ব্রিকস’। ইটের নামও রাখা হয়েছে ‘জীবন’ থেকে ‘জীরন’। শুধু মাত্র জীবনের ব-এর নিচে ফোটা দিয়ে ‘র’ বসিয়ে জীরন নামের ফর্মায় চলছে ইট তৈরি। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় সম্পূর্ণ আইন অমান্য করে চালু থাকা ‘মেসার্স জীরন ব্রিকস’ এর সন্ধান পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ এড়িয়ে লাখ লাখ ইট উৎপাদন ও বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে সরকার বিপুল অংকের টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় চালু থাকা ইটভাটাটির নাম ‘মেসার্স জীরন ব্রিকস’। ইটের নাম ‘জীরন’। এই ইটভাটাটি চলতি ইট উৎপাদন মওসুমে স্থাপিত হয়নি। এটি একটি রেডিমেড ইটভাটা। এই ইটভাটার প্রকৃত মালিক জামালপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক জীবনের বাবা মো. ইউসুফ আলী। ইটভাটার নাম ছিল ‘মেসার্স জীবন ব্রিকস’ ও ইটের নাম ছিল ‘জীবন’। এমদাদুল হক জীবন তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করলেও মূলত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার দাপটে ইটভাটা সংক্রান্ত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করতেন। সমাজের প্রতাপশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতেও সাহস পেতেন না। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হওয়ায় বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

পরিবেশ অধিপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মনসুর চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদরের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর এলাকার স্টার-১ ইটভাটা, পৌরসভার জঙ্গলপাড়া দিয়াপাড়ায় কিং ইটভাটা, শরীফপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় মেসার্স জীবন ব্রিকস ও দিগপাইত ইউনিয়নের ছোনটিয়া মোড় এলাকায় নসিব ঢাকা ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সেদিন ওই চারটি ইটভাটার মালিককে ২৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে জীবন ব্রিকস কর্তৃপক্ষকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের জামালপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুকুমার সাহা গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ওই চারটি ইটভাটায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছিল না এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত ছিল।

১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে সরজমিনে গিয়ে মেসার্স জীরন ইটাভাটায় বেশ কর্মচঞ্চল পরিবেশ দেখা গেছে। তিন ফসলি জমিতে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই ভাটাটি। ইটভাটায় কয়লার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ গাছের গুঁড়িও দেখা গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ইটভাটায় গাছের গুঁড়ি বা কাঠ বা লাকড়ি পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু কথিত ‘জীরন’ ইটভাটায় কয়লার চাইতে বিপুল পরিমাণ গাছের গুঁড়ি পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার চিমনি বেশ উঁচু হলেও গাছের গুঁড়ি বা অন্যান্য কাঠ পোড়ানোর কারণে পর্যাপ্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা গেছে। জীরন ইটভাটার বর্তমান মালিকানার অন্যতম অংশীদার দাবিদার মো. আনিছুর রহমানের সাথে দেখা হলো। ইটভাটা সম্পর্কে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হলেন না। তিনি এই ইটভাটার ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম দুলালের সাথে যোগাযোগ করতে বললেন। এ সময় ম্যানেজার ইটভাটায় ছিলেন না। ইটভাটাটির অন্য কোন মালিককে খোঁজে পাওয়া গেল না।

কথিত ইটভাটা মেসার্স জীরন ব্রিকস। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম
পরে ফোনে মেসার্স জীরন ব্রিকসের ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম দুলাল বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এমদাদুল হক জীবন এই ইটের ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ান। ইটভাটার মালিক এমদাদুল হক জীবনের বাবা মো. ইউসুফ আলী স্থানীয় মো. ছামিউল ইসলামের কাছে ব্যবসায়িক চুক্তির ভিত্তিতে ইটভাটাটি হস্তান্তর করেন। এরপর ছামিউল ইসলাম আরও আটজন ব্যবসায়ী মালিকানার অংশীদার যুক্ত করে চলতি মওসুমে ইটভাটার কার্যক্রম চালু করেছেন। বর্তমান মালিকেরা আগের ‘মেসার্স জীবন ব্রিকস’ নাম ও ইটের নাম ‘জীবন’ পরিবর্তন করে ‘মেসার্স জীরন ব্রিকস’ ও ইটের নাম ‘জীরন’ রেখে জামালপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন অনুমোদনের জন্য। জেলা প্রশাসন এখনও অনুমোদন দেননি।

এভাবে জেলা প্রশাসনের ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ছাড়া ইটভাটা চালু করা আইনবিরোধী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম দুলাল কোনরূপ সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে ইটভাটাটি আগে থেকেই সবাইকে ম্যানেজ করেই চলে আসছে এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমান অনর্বর্তীকালীন সরকারের এই কয়েক মাসেও এখনও পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই বলে দাবি করেন। ইটভাটায় পুরাদমে ইট উৎপাদনের কার্যক্রম চলমান আছে বলে স্বীকার করলেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর জামালপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুকুমার সাহা বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, এর আগে মেসার্স জীবন ব্রিকসে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই ইটভাটা সম্পর্কে পরিবেশ অধিদপ্তরে কোন অভিযোগ করেনি কেউ। তাই জানিনা যে নাম পরিবর্তন করে মেসার্স জীরন ব্রিকস নামে সেখানে ইটাভাটায় ইট উৎপাদন হচ্ছে। মেসার্স জীরন ব্রিকস ও তাদের ইটের নাম জীরন নামের কোন সরকারি অনুমোদনও নেই। বিষয়টি আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আইনি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 
error: Content is protected !!