মোঃ রবিউল হোসেন খান : খুলনা: সুন্দরবনে আত্মসর্মপন কারী বনদস্যুবাহিনীর উৎপাত, মুক্তিপন দিয়ে ছাড় পাচ্ছে জেলেরা। সুন্দরবনে পশ্চিম বিভাগে উৎপাত শুরু করেছে বনদস্যুরা।আত্মসমর্পনকারী বনদস্যুরা নতুন করে আবার সেখানে আতংক সৃষ্টি করেছে।গেল ১৫ দিনে অন্তত ৫০ জেলেকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।অস্ত্র হাতে তিন বাহিনীর অত্যাচারে জেলেদের দুর্ভোগ বেড়েছে। টোকেন না নিয়ে বনে গেলেই পড়তে হচ্ছে সশস্ত্র দস্যুদের কবলে। এ পরিস্থিতি বনদস্যুদের দমনে আইন শৃংখলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।জেলে সুত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় তিন বাহিনী দস্যুতা শুরু করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পন করে সাভাবিক জীবনে গিয়েছিল। পরে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নামে সকল মামলা প্রত্যাহার, আর্থিক অনুদান সহ নানান সুযোগ সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানের পর তারা আবার দস্যুতায় ফিরেছে। তিন বাহিনীর মধ্যে আত্মসমর্পন করা মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু নিজেই এখন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে মজনু প্রথম দস্যুতায় ফিরে যান।তার দেখা দেখি আলিম,মিলন পাটোয়ারী ও রবিউল পশ্চিম সুন্দরবনের পুর্ব প্রান্তে দস্যুতা শুরু করে। মোংলা, নলিয়ান,এলাকায় দস্যুতা শুরু করে আসাবুুর বাহিনী। বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ ১১ সদস্যকে নিয়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আত্মসমর্পন করে মজনু বাহিনী। এর পর থেকে তারা সাভাবিক জীবন যাপন করেছিল। কিন্তু ফের মজনু নিয়েই দস্যুতায় আবার নেমেছে। এক সপ্তাহে ৮ জেলেকে অপহরণ করেছে মজনু বাহিনী। কয়রা ৬ ও ৪ নং গ্রামের সুশান্ত রপ্তান,তপন মল্লিক, ছলেমান মোল্লা, নজরুল গাজী, জিয়ারুল,আজিজুল ইসলাম, মোংলা গাইন,গনেশ,মফিজুল গাজী দস্যুদলের কবলে পড়েন।পরে নৌকা প্রতি ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন দিয়ে তারা ফেরত আসেন।এবার দক্ষিন বেদকাশি জোড়শং,মহেশ্বরপুর থেকে ২০ জেলের কাছ থেকে নৌকা ও জনসাধারণকে আটকে টাকা আদায় করেছে।সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাকড়া শিকারী তিন জেলেকে অপহরণ করে মজনু বাহিনী, পরে জিম্মি জেলেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুক্তিপনের অংক নিশ্চিন্ত করে দস্যু বাহিনী। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে আত্মসমর্পনকারী আসাবুর ফের দস্যুতা শুরু করেছে দাকোপ এলাকায়।ওই এলাকায় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন,স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি ৭ আগষ্ট থেকে আসাবুর বাহিনী দস্যুতায় নেমেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশের জন্য আসাবুর বাহিনী টোকেন বানিজ্য শুরু করেছে। যার প্রতি টোকেনের মুল্য ২০ হাজার টাকা সাথে ৪ শত টাকাও মোবাইল ব্যাংকিং দিতে হচ্ছে।এই টোকেন প্রথমবার নিলে, মাসিক আবার ২ হাজার দিয়ে নবায়ন করতে হচ্ছে।তবে যদি কেউ টোকেন না নিয়ে বনে প্রবেশ করে তাহলে তাদের অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করা হচ্ছে।এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, গত কয়েকদিন আমার এলাকায় অন্তত ৪০ জন জেলে এই দস্যু বাহিনীর হাতে অপহ্নত হয়েছে। পরে তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে খরচ সহ ২০ হাজার ৪০০ শত টাকা পাঠাতে হয়েছে। তার পর মুক্তি মিলেছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন,বেশ কয়েক জায়গা থেকে জেলে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করে পুলিশের সাথে কার্যক্রম চালাচ্ছি। এদিকে জেলে বাওয়ালীরা প্রতিনিয়ত দস্যুদের কবলে পড়লেও এ বিষয়ে তেমন কোন প্রতিকারের উদ্যোগ নিচ্ছে না আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে খুলনার পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সমম্বিত কার্যক্রম চলছে।নৌ পুলিশের সাথে অভিযান চালেনো হয়েছে। কয়রায় অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছিল র্যাব।তবে এবার তাদের কার্যক্রম না থাকায় হতাশ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী। এ বিষশে র্যাব- ৬ এর কমান্ডার লে: কর্নেল ফায়েজুল আরেফিনের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।