আব্দুস সামাদ লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলায় চলতি বছরে ১৫৪ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ করা হয়েছে। দিন দিন তুলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে ব্যাপক ফলন দেখে বুঝা যাচ্ছে খরচের তুলনায় এবার কৃষকরা কয়েক গুণ বেশি লাভ হবে। কয়েক বছর ধরে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় লালমনিরহাটের স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলা পর্যায়ের কটন ইউনিট অফিসার মোঃ রেজাউল করিম জানান, তুলার প্রদর্শনী প্লট হাইব্রীড (হোয়াইট গোল্ড-২) জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। এ জাত মাঠে ১৬-২০ মন হারে বিঘা প্রতি ফলন হয়। লালমনিরহাট জেলায় চলতি বছরে ১৫৪ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদের লক্ষ্যে মাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কৃষকের নিজ অর্থায়নে চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা। তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে জুনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত জমিতে তুলা বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে সরকার । লালমনিরহাট জেলায় কম পুঁজিতে নামে মাত্র শ্রমে ও সরকারি সহযোগিতায় তুলা চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নেয়। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় তুলাতে অধিক লাভবান হচ্ছেন। সরকারি সহায়তায় কৃষকরা হাইব্রীড (হোয়াইট গোল্ড-২) জাতের তুলার চাষ করছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার অক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এতে তুলা চাষি কীটনাশকের বদলে ফেরোম্যান ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন। তুলা চাষি বৈদ্যনাথ রায় জানান, বর্তমানে তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। নিজের ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে তুলা চাষ করেছেন। তুলা চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অনেক অনুর্বর, নিস্ফলা বা অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। তুলা চাষি রমেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, নিস্ফলা জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা বেশ টাকা পাচ্ছেন, তাদের পরিবারে আসছে স্বচ্ছলতা। তাই অনেকে ধান ও গমসহ বিভিন্ন আবাদ ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তুলা চাষী রমেশ চন্দ্র বর্মণ আরও বলেন, রংপুর জোন তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে তুলার সাথে সবজি, মসলা, ডাল ও অন্যান্য ফসলের চাষ কর্মসূচির অর্থায়নে লালমনিরহাট ইউনিটে কোদালখাতা ব্লকে আমার ২৫ শতক জমিতে তুলার প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। আমার সুপারি বাগানে তুলার সাথে মুগ ডালের চাষ প্রদর্শনীতে হাইব্রীড (হোয়াইট গোল্ড-২) জাতের চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে ফুল থেকে ফসল আসছে। তুলা চাষিরা জানান, হোয়াইট গোল্ড-১ জাতের তুলা প্রতি বিঘাতে বীজসহ উৎপাদন হয় ১৫ মণ থেকে ২০ মণ করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। এমন অনুর্বর জমিতে অন্য কোনো ফসলে এই লাভ পাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করা যায় বলে চাষিরা জানান। তাইতো তুলা চাষিদের মধ্যে অনেকে বলেন, জমির তুলা চাষে, লাখপতি অনয়াসে। প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদেরকে বিনামূল্যে তুলাবীজ, সার, অনুসার, কীটনাশক ও আগাছানাশক বিতরণ করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার চাষিদের তুলাচাষের মাধ্যমে কিভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা যায় সে লক্ষ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে চাষিরা তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড তুলার চাষ করছে এবং এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড চাষিদেরকে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন কলাকৌশল আর সেবা দিয়ে যাচ্ছে আর এতে চাষীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে তুলা চাষে আগ্রহ পাচ্ছে। সেই সাথে সাথী ফসল হিসেবেও তুলা চাষ করছেন চাষীরা।